আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, প্রতিটি মানুষেরই মেধা রয়েছে। তবে কেউ তা ব্যবহার করে সফলতার দিকে অগ্রসর হন কেউবা তা ব্যবহার না করে বিফলতার দিকে ধাবিত হন। ক্লাসের সবাই ভালো ছাত্র হতে পারেন না। আর ভালো ছাত্র হয়ে ওঠা জীবনের জন্য কতটা জরুরী এটাও অনেকে বোঝেন না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে শ্রেণীকক্ষে অমনোযোগী থাকা। যেসকল শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে মনোনিবেশ করতে পারেনা, তাদের পক্ষে বাসায় এসে ক্লাসের পড়াগুলো অনুশীলন করাও আর সম্ভব হয়ে উঠেনা। ফলস্বরূপ তাদের দারস্থ হতে হয় দ্বিতীয় বিদ্যালয় বা বহুছাত্র বিশিষ্ট কোন প্রাইভেট সেন্টারের। কোচিং সেন্টারগুলো যেহেতু অনেক টাকার বিনিময়ে তাদের শিকার ধরে, তাই সেখানে নিজ দায়িত্বে লেখাপড়াটা গিলিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। সেখানেও যারা অমনোযোগী থাকে তাদের তৃতীয় বিদ্যালয় অর্থাৎ বাসায় প্রাইভেট শিক্ষকের সম্মুখীন হতে হয়। সেখানেও মনোযোগের অভাব হলে ফলাফলের জায়গাটা বেশ ফাঁকাই পড়ে থাকে। অবশেষে নাম ঢুকে যায় খারাপ ছাত্রের তালিকায়।

বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, কোচিং সেন্টার ও বাসায় শিক্ষক থাকার ফলে বাচ্চারা এখন আর শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করে না। এতে যে শুধু বাচ্চাদেরই ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, অপমানবোধে ভোগেন অনেক শিক্ষকও। অথচ শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ দিলে কোন শিক্ষার্থীকেই সময় ও অর্থ নষ্টকারী দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিদ্যালয়গুলোর দ্বারস্থ হতে হবে না, এটা আমরা বিশ্বাসই করতে চাইনা।

একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে ভালো ছাত্র হওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন তার জীবনের একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে। ভালো ছাত্র হতে চাইলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে:

ভবিষ্যতমুখী চূড়ান্ত লক্ষ্য স্থির করণ:
একজন ছাত্রকে শিক্ষাজীবনের শুরুতেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী হবে তা ঠিক করে নিতে হবে। আমি কি হতে চাই? একজন শিক্ষাবিদ, একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক, সুবিজ্ঞ আলেমে দ্বীন, ইতিহাসবেত্তা, অর্থনীতিবীদ, সমাজসেবী, বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার না অন্য কিছু। কারণ লক্ষ্যহীনভাবে এগুতে থাকলে কোন কাজে সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। সাময়িক যা সফলতা আসবে তাও কার্যকরী হবে না।

নিজের উপর আস্থাবান হওয়া বা দৃঢ় ইচ্ছা ও বিশ্বাস লালন করা:
বিশ্বাস ও দৃঢ় ইচ্ছা হচ্ছে আত্মার খোরাক, পথ চলার শক্তি। বিশ্বাস হতে চিন্তা এবং চিন্তা হতে কার্যের উৎপত্তি। প্রত্যেকের কাজের ফলাফল তার বিশ্বাসের অনুরূপ হয়ে থাকে। তাই হচ্ছেনা, আমার দ্বারা হবেনা এ ধরণের সমস্ত মনোভাব ঝেড়ে ফেলে আমি পারবোই এমন একটি চালিকাশক্তি অন্তরে সঞ্চার করে সামনে এগুতে হবে। আমি শিক্ষাজীবন শেষে আমার লক্ষ্য অর্জন করবোই এমন একটি তেজ জমাও। আর রুটিনমাফিক দৈনন্দিনকার কাজ করে যাও, তুমি তোমার লক্ষ্যে অবশ্যই পৌছাবে।

দৈনন্দিন জীবন যাপনের একটি রুটিন ম্যাপ একে নিন:
সফলতা লাভে সঠিক প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন সঠিক সময় নির্দেশনা। তাই রুটিনমাফিক দিন অতিবাহন অত্যন্ত জরুরি। কাজেই আপনি ছাত্রজীবনে যে ধরনের কাজ করছেন তার একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। রুটিনে পড়াশুনা এবং অন্যান্য কাজ যেমন- ঘুম থেকে উঠা, নাস্তা ও খাবার গ্রহণ, খেলাধুলা এবং শারীরিক ব্যায়াম এর জন্য সময় নির্ধারণ করুন। নামাজ/উপাসনার প্রতি যত্নবান হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কেননা, এতে হৃদয় ও মন প্রফুল্ল থাকে এবং কাজে গতি আসবে। পড়ালেখার জন্য নির্ধারিত সময়কে প্রতিটি বিষয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান ভাগ করে নিয়ে একটি টাইম রুটিন তৈরি করে ফেলুন। এতে করে সকল বিষয় যেমন সমান গুরুত্ব দেয়া যায় তেমনি পড়াটাও সহজতর হয় এবং সব বিষয়ে’র দূর্বলতা কেটে যাবে। যাবতীয় বিষয়ের মৌলিক জ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করুন, এতে প্রাসঙ্গিক বিষয় সমুহ আয়ত্ত করতে সুবিধে হবে।

অধ্যাবসায় ও নিয়মিত ক্লাশে উপস্থিতি:
অধ্যাবায় ছাড়া একজন ছাত্র কখনোই ভালো ছাত্র হতে পারে না। কঠিন অধ্যাবসায়ই একজন ছাত্রকে ভালো ছাত্র হতে সহায়তা করে থাকে। আর এই অধ্যাবসায়ের পূর্ব শর্ত হচ্ছে বিদ্যালয়ের ক্লাশে অনুপস্থিত না থাকা। নিয়মিত সব ক্লাশে অংশ নেয়া, মনাযোগ দিয়ে লেকচার শুনা এবং লেকচারের গুরত্বপুর্ন পয়েন্টগুলো খাতায় নোট করে নেয়া, বাসায় ফিরে ক্লাশের পড়া তৈরি করা, রিভাইস দেয়া, রিহার্সাল করা এবং সকল বিষয়ের জন্য আলাদা নোট খাতা রাখা এগুলো অধ্যাবসায়ের দৃষ্টান্ত। নিজে নিজে নোট করে পড়ার অভ্যাস করলে বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে পড়াগুলোকে নিজের মতো করে সাজাতে হবে। মুখস্থ করা বিষয় সমুহ না দেখে লিখার অভ্যাস গড়ে তুললে দীর্ঘ সময় মনে থাকে। অংকের ক্ষেত্রে একবার অংক বুঝে’ই পরিতৃপ্তির ঢেকুর না তুলে বরং বেশী বেশী অনুশীলন করতে হবে। মোদ্দাকথা, কঠিন অধ্যাবসায়ই আপনাকে একজন ভালো ছাত্র তৈরি হতে সহায়তা করবে।

খারাপ বন্ধু ত্যাগ করা:
ভালো ছাত্র হতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হল খারাপ বন্ধুগুলোকে ত্যাগ করতে হবে। খারাপ বন্ধু থাকলে আপনার সময়গুলো খুবই বাজেভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। পড়াশুনা করতে পারবেন না,এমনকি মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারেন। এ কারণে ভালোভাবে পড়াশুনায় মনোযোগ আনতে আপনি আপনার বন্ধুচক্র থেকে খারাপ বন্ধুদের বাদ দিয়ে দিন প্রয়োজনে কিছু ভালো বন্ধু যোগ করুন।

সারকথা:
জ্ঞান অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে প্রশ্ন করা। যে শিক্ষার্থী যত বেশী প্রশ্ন করতে পারদর্শী সে শিক্ষার্থী ততো ভাল ছাত্র। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক/শিক্ষিকাকে প্রশ্ন করার সময় বন্ধুরা কে কি ভাবলো তার তোয়াক্কা না করে প্রশ্ন করার মাধ্যমে না বুঝা বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে। কেবলমাত্র পাঠ্য বই নয়, বরং পাঠ্য বইয়ের বাইরেও অন্যান্য বইও পড়তে হবে, যা আপনার সৃজনী শক্তি বৃদ্ধি করবে। আর তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কোন শিক্ষার্থী কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহার না জানলে কখনোই একজন ভাল ছাত্র হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবে না।

মোঃ আব্দুল হাই খান
পরিচালক
গাইবান্ধা কম্পিউটার এন্ড আইটি এডুকেশন।
E-mail: haikhan2002@gmail.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *