সুখ এবং দুঃখ সব সময়ই সহাবস্থানে থাকে। প্রত্যেক মানুষের প্রত্যেক কর্মের এক পিঠে সুখের অবস্থান এবং অন্য পিঠে দুঃখের অবস্থান। তবে কোনটি অগ্রাধিকার পাবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির উপলব্ধির ওপর। একই কর্ম করে একজন নিজেকে সুখী মনে করে আর কেউবা নিজেকে দুঃখী ভাবে। কারণ সুখ এবং দুঃখ এর প্রত্যেকটি হচ্ছে আপেক্ষিক বিষয়। কাজেই ব্যক্তির উপলব্ধির ওপর নির্ভর করে সুখ এবং দুঃখ এর মধ্যে কোনটি অগ্রাধিকার পাবে। বাড়ীর কর্তা, তা সে দিনমজুরই হোক আর কোন ধনী ব্যক্তিই হোক, কঠোর পরিশ্রম করার পর যদি এটা অনুভব করে যে, পরিশ্রম যাইহোক অন্ততঃ সংসারটা তো ভালোভাবে চালাতে পারছি, তাহলে এটা তার মাঝে সুখের অনুভূতি জাগায়। অন্যদিকে যদি তার অনুভব হয় যে, হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর সহ্য হয় না, কেন যে সংসার করতে গেলাম, তাহলে এটা তার মাঝে দুঃখের অনুভূতি জাগায়। একইভাবে কোন পিতা-মাতার সন্তানেরা যদি লেখাপড়া শিখে বিদেশে কর্মরত থাকে আর পিতা-মাতা বাড়ীতে থাকে এমতাবস্থায় যদি পিতা-মাতার মনে এটা অনুভব হয় যে, সন্তানরা কাছে নাই তাতে কি, সন্তানকে তারা উপযুক্তভাবে মানুষ করতে পেরেছে এটা্ই অনেক, তাহলে এটা তাদের মাঝে সুখের অনুভূতি জাগায়। অন্যদিকে যদি তাদের মাঝে এটা অনুভব হয় যে, কঠোর পরিশ্রম করে সন্তান মানুষ করে কী পেলাম, কেউই তো বৃদ্ধবয়সে কাছে রইলো না, তাহলে এটা তাদের মাঝে দুঃখের অনুভূতি জাগায়। রাধুনি বিশেষ করে বাড়ীর বউ যদি অনেক সুন্দর সুন্দর খাবার রান্না করার পর এটা অনুভব করে যে আজ পরিবারের সকলে খুব মজা করে খেতে পারবে, তাহলে এটা তার মাঝে সুখের অনুভুতি জাগায়। অন্যদিকে যদি পরিশ্রম করে রান্না করার পর সে অনুভব করে যে, রোজ রোজ আমাকে কষ্ট করে এতগুলো রান্না একাই করতে হয়, আর ভালো লাগেনা, তাহলে এটা তার মাঝে দুঃখের অনুভূতি জাগায়। এমনিভাবে মানুষের প্রতিটি কর্মের ক্ষেত্রে ব্যক্তির উপলব্ধির ওপর নির্ভর করে ব্যক্তি হৃদয়ে সুখ বা দুঃখের অনুভূতি জাগ্রত হয়।

প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা হচ্ছে, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য(চিকিৎসা) ও্ নিরাপত্তা। যদি কোন মানুষের জীবনে একত্রে এই ৫টি জিনিসের সমন্বয় ঘটে তাহলে এ পৃথিবীতে সেই ব্যক্তিই সব থেকে সুখী মানুষ। কিন্তু বাস্তবে একত্রে এই ৫টি জিনিসের সমন্বয় খুব কম মানুষের ভাগ্যেই ঘটে। বিশেষ করে যারা উপার্জন করতে করতে টাকার পাহাড় গড়েছেন, তাদের তো শেষোক্ত জিনিস দু’টির অভাব সর্বদাই পরিলক্ষিত হয়। সুস্থতা যে মহান সৃষ্টিকর্তার কত বড় নেয়ামত তা অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া আর কারো পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তবে সমস্যাটা হচ্ছে, বেশীরভাগ মানুষ সুস্থ হওয়ার পর তার অতীতকে ভুলে যায়।

দু’বেলা দু’মুঠো খাবার ঠিকঠাক ভাবে জুটলে, দামী পোশাক আর দামী বিছানাপত্র নাই বা থাকলো, যদি শরীর মন সুস্থ থাকে, রাতে কোন রকম টেনশন ছাড়াই আরামে ঘুমানো যায়, তাহলে এর থেকে সুখ আর কী হতে পারে? কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, অধিকাংশ মানুষই এর মাঝে সুখ খুঁজে পায় না। বেশীর ভাগ মানুষের কাছে সুখের মাপকাঠি হচ্ছে অর্থ-সম্পদ অর্থাৎ যার অর্থ-সম্পদ বেশী তিনিই হচ্ছে সুখী মানুষ। অবশ্য এই উপলব্ধিটা যার অর্থ-সম্পদ নেই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু বাস্তবে জরীপ করলে দেখা যাবে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া স্বত্ত্বেও তাদেরকে সুখের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হয় তারা নিরব থাকেন, নয়তো সরাসরি জবাব না দিয়ে হাজারো সমস্যার ফিরিস্তি জাহির করতে থাকেন; যা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, অর্থ-সম্পদ থাকলেও বাস্তবে আসলে তারা সুখী নয়।

মানুষের জীবনে সুখের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনস্বীকার্য কিন্তু অর্থ-সম্পদ কখনোই সুখের মাপকাঠি নয়। এ জগতে তারাই নিজেকে সুখী ভাবতে পারেন, যারা সৃষ্টিকর্তার প্রতি অনুগত। যারা মনে করেন, পৃথিবীতে আমার আগমন আমার নিজের ইচ্ছায় ঘটেনি; যিনি আমাকে এ পৃথিবীতে এনেছেন, তিনিই সকল ভাল-মন্দের মালিক। সুখে থাকার জন্য আমার যা যা করণীয় আমি অবশ্যই সেগুলো করার চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ব্যতিত আমি নিজে নিজে সুখী হওয়ার ক্ষমতা রাখিনা। কাজেই তিনি যেভাবে রাখবেন তাতেই আমার খুশী থাকা উচিৎ, আর এরাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সুখী মানুষ।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *