আগেকার দিনে এবং সম্ভবত এখনও মানুষ দা, কুড়াল, কাঁচি, বটি ইত্যাদি ভোতা হয়ে গেলে কামারের নিকট তথা কামারশালায় দিয়ে অপেক্ষা করতো শার্প তথা ধার দিয়ে দেয়ার জন্য। এককথায় ভোতা অস্ত্র ধার দিতে কামারের কোন জুড়ি নেই। আজকাল শিক্ষার অবস্থাটা ঠিক তদ্রুপ। শিক্ষার্থীদের ব্রেইনকে শার্প তথা ধার দেয়ার জন্য কোচিং সেন্টারের কোন জুড়ি নেই। তাই এখন হরহামেশাই দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক তার সন্তানকে কোচিং সেন্টারে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছেন। অস্ত্রে ধার দেয়ার মতই যেন কোচিং সেন্টারে সন্তানের ব্রেইনকে ধার দেয়া হচ্ছে। ধার দেয়া শেষ হলেই ছুটি হবে, তাই অপেক্ষা। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেতে অভিভাবকদের চিন্তার শেষ নেই। সন্তানের মেধা বিকশিত হচ্ছে কি না সেটা কোন ব্যাপার নয় বরং সর্বোচ্চ জিপিএ পেতে অভিভাবকদের মধ্যে শুরু হয় অসুস্থ প্রতিযোগিতা। অবস্থা এমন যে, জিপিএ-৫ পেতে হলে বিদ্যালয়ের বাইরে প্রাইভেট আর কোচিংয়ের কোন বিকল্প নেই। এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে না পারলে কখনোই একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন সম্ভব নয়।
সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করার সময় তার মাঝে ব্রেইন দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ঘষা-মাজা ছাড়া এই ব্রেইন কখনোই বিকশিত হয় না। তবে একজন শিক্ষার্থীর ব্রেইন ঘষা-মাঝার উত্তম জায়গা হচ্ছে পাঠশালা। একজন আদর্শ শিক্ষক কেবল পাঠদানের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না বরং আদর্শ শিক্ষক সর্বদাই চিন্তা-ভাবনা, পরিকল্পনা, গবেষণা করেন, কী করে শিক্ষার্থীদের ব্রেইনকে ঘষা-মাজা করে আরো বেশী শার্প করা যায়। কেননা, কেবলমাত্র পাঠ্য বইয়ের কিছু গতানুগতিক বিষয়ে পাঠদান করলেই একজন শিক্ষার্থীর ব্রেইন শার্প হয়না। এজন্য প্রয়োজন নতুন নতুন আইডিয়া উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করা। কিন্তু এদেশের শিক্ষার্থীদের শার্পনেস পরিমাপ করা হয় এ+ দ্বারা; তাই আমাদের দেশের অধিকাংশ অভিভাবকই বিদ্যালয়ের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। আর সন্তানের ব্রেইনকে বিকশিত করার সুযোগ না দিয়ে ব্রেইণ শার্প করার প্রত্যায়ে কোচিংয়ে পাঠিয়ে আরো ভোতা বানানোর ব্যবস্থাটা নিশ্চিত করছেন।
গবেষণায় দেখা যায়, আগেকার যুগের শিশুদের তুলনায় এখনকার যুগের শিশুদের ব্রেইন জন্মগত ভাবেই বেশী শার্প। তাই এটা বলাই যায় যে, যদি এখনকার যুগের শিশুরা আগেকার যুগের পাঠশালাটা ফিরে পেত তাহলে নিশ্চিত পাঠশালা থেকে তারা কেবল মেধাবী নয় বরং এক একটি বুলেট হয়ে বেড়িয়ে আসতো। আমাদের অভিভাবকদের উচিৎ সন্তানকে কামারশালায় ভোতা অস্ত্র দিয়ে অপেক্ষা করার মত কোচিংয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা না করে বরং একবার নিজেই যাচাই করে দেখুন না আপনার সন্তানের ব্রেইন শার্প না ভোতা। যদি ব্রেইন সত্যিই ভোতা হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য বাড়তি কেয়ার নেয়া যেতেই পারে। কিন্তু লেখাপড়া করতে হলে কোচিং প্রাইভেট পড়তেই হবে এটা যখন বদ্ধমূল বিশ্বাস হয়ে দাঁড়ায় তখন ভোতা অস্ত্র কামারশালায় দেয়া আর সন্তানকে কোচিংয়ে দেয়ার মাঝে কোন তফাৎই থাকে না।