বাংলাদেশের নাগরিকগণ ৩টি শ্রেণীতে বিভক্ত যথা- ১. ধর্মান্ধ ২. ধর্ম বিদ্বেষী ৩. ধর্মনিরপেক্ষ। যদিও ১ম দুই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা খুবই কম তবুও বাস্তবতা হচ্ছে এদের দৌরাত্বই সবথেকে বেশী পরিলক্ষিত হয়। আমার ধারণা এদেশের শতকরা ৮০% এর অধিক মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ যারা রাষ্ট্রের সংবিধান নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না যদিও এদের অধিকাংশ মানুষ আবার ধর্মপ্রাণও বটে। কেননা, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার বিধান যা আজকাল রাজনীতিদরা নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেই সবথেকে বেীশ অভ্যস্ত। কোন সভ্য দেশে ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্ম চর্চায় সংবিধান কখনোই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। আর যদি তা করে তবে সেটা হচ্ছে জুলুম। তাহলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা বা না থাকায় কী আসে যায়? যে ফল খেলে অনেকের পেটে সহ্য হয়না সেই ফল এ দেশের জাতীয় ফল, যে মাছ এদেশের সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে সেই মাছ এদেশের জাতীয় মাছ, যে দেশে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি বাঘের বসবাস সেই দেশে ঐ বাঘই হচ্ছে জাতীয় পশু তাহলে যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান সে দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ধর্ম/জাতীয় ধর্ম ইসলাম উল্লেখ থাকা বা না থাকায় কী আসে যায়? সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ধর্ম উল্লেখ না থাকলে কি এদেশের সকল মানুষ ধর্মহীন হয়ে পড়বে; নাকি সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম উল্লেখ থাকলে এদেশ থেকে অন্যান্য ধর্মের মানুষগুলো পালাতে বাধ্য হবে?

ধর্মান্ধরা মনে করেন, গেল গেল, দেশ থেকে এই বুঝি ইসলাম গায়েব হয়ে গেল। অন্যদিকে ধর্মবিদ্বেষীরা মনে করেন, এই বুঝি তাদের পাছায় লাথি মেরে এবার মসজিদে যেতে বাধ্য করা হবে, নয়তো দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মচর্চার সাথে সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম থাকা বা না থাকার যেমন কোন সম্পর্ক নেই, ঠিক তেমনিভাবে এগুলো থাকলে ধর্মবিদ্বেষীদেরও গাত্রদাহের কোন কারণ নেই। যে দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান, যে দেশের শাসনভার মুসলমানদের হাতে, সে দেশের সংবিধানে মুসলিম রীতিনীতির প্রভাব থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। সুতরাং তা নিয়ে অযথা মাথা ঘামানোটা অর্থহীন। “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার”- একজন প্রকৃত মানুষ তার হৃদয়ে এটাই লালন করেন, চাই সে মুসলিম, হিন্দু কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের অনুসারী হোন না কেন। কোন দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা মুসলিম, হিন্দু নাকি অন্যকোন ধর্মের অনুসারীদের হাতে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয় বরং ক্ষমতাসীন সেই মানুষগুলোর মাঝে যদি সামান্যতমও মনুষ্যত্ববোধ থাকে তবে শাসক হিসেবে তিনি/তারা কখনোই কেবলমাত্র ধর্মীয় কারণে কোন মানুষের প্রতি অবিচার কিংবা পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন না। যার ধর্ম যাই হোক না কেন, প্রত্যেক রাষ্ট্রে নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক মানুষের অধিকার সমান এবং প্রত্যেক ধর্মও মানুষকে এটাই শিক্ষা দেয়। প্রকৃতপক্ষে তরাই ধর্মবিদ্বেষী যারা এটা মানতে চান না। আর একটা চরম বাস্তবতা হলো, ক্ষমতাসীন দল সব সময়ই চায় তারা যেন আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারে, এজন্য সংবিধানকে তারা নিজের খেয়াল-খুশিমত ব্যবহার করতে চায়। অন্যদিকে যারা ক্ষমতার বাইরে থাকেন তারা ভাবেন, একবার কোনভাবে ক্ষমতায় যেতে পারলে হয়, সব ওলটপালট করে ফেলবো; এর নামই হচ্ছে রাজনীতি। যুগে যুগে এ পৃথিবীতে আর্বিভূত/বিকশিত সকল ধর্মেরই মূল শিক্ষা হচ্ছে, নিজে ভালো থাক, অন্যকে ভালো রাখো এবং স্রষ্টার গুণকীর্তন কর। কাজেই ধর্মান্ধ কিংবা ধর্মবিদ্বেষী না হয়ে বরং একজন প্রকৃত মানুষ হউন। স্রষ্টার গুণকীর্তন করতে চাইলে করবেন, না চাইলে না করবেন। তবে মনে রাখবেন, প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীতমূখী প্রতিক্রিয়া আছে, এটাই স্রষ্টার মতান্তরে প্রকৃতির বিধান।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.