ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে ‘নামাজ’। যখনই কোন মানুষ কলেমা পাঠ করে নিজেকে একজন মুসলমান বলে দাবী করেন, তখনই তার উপর ‘নামাজ’ আবশ্যক হয়ে যায়। নামাজ আদায় কেবলমাত্র আল্লাহর নির্দেশনা পালনের জন্যই নয় বরং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যায়াম হচ্ছে ‘নামাজ’। বলা হয়ে থাকে “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল” যদিও বাস্তবে আমরা বেশীর ভাগ মানুষই বিশ্বাস করি “অর্থই সকল সুখের মূল”। তবে যিনি অগাধ সম্পদের মালিক হয়েও শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য নন কেবলমাত্র তার কাছেই “অর্থই সকল সুখের মূল” কথাটি একটি অবাস্তব বিষয়। আর যদি ধরেই নিই “অর্থই সকল সুখের মূল” তাহলেও তো সে অর্থ উপার্জন করার জন্য সুস্থ্য শরীর ও সুস্থ্য মন দরকার। শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য আমারা যা যা করি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ব্যায়াম’। আর বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণার অগ্রগতির ফলে ‘ব্যায়াম’ এর সাথে যুক্ত হয়েছে মেডিটেশন, কোয়ান্টাম ইয়োগা, কোয়ান্টাম ম্যাথড এমনকি দেশ-বিদেশে গড়ে উঠেছে “কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন” এবং এর শাখা-প্রশাখা।
Meditation শব্দের অর্থ হলো ধ্যান, যেখানে সচেতনভাবে দেহ, মন এবং মস্তিষ্ককে শিথিল করার মাধ্যমে টেনশন ও অস্থিরতা থেকে মুক্ত হয়ে দেহ-মনে সুখানুভূতি তৈরির চেষ্টা করা হয়। আর Quantum শব্দের অর্থ হলো পরিমিতি যাকে Science of Living বা জীবন-যাপনের বিজ্ঞানও বলা হয়ে থাকে। কোয়ান্টামের পঞ্চসূত্র হলো প্রশান্তি, সুস্বাস্থ্য, প্রাচুর্য, সুখী পরিবার ও ধ্যান। মেডিটেশন বা কোয়ান্টামের মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি এবং সম্ভাবনাকে জাগ্রত করে ব্যক্তির আত্মিক, বৈষয়িক, পারিবারিক ও স্বাস্থ্যগত উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়। কোয়ান্টাম ম্যাথড অনুযায়ী একজন মানুষ চাইলে সঠিকভাবে মেডিটেশনের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলতে পারে। বলা বাহুল্য, যুগে যুগে পৃথিবীতে আবির্ভূত সকল ধর্মের বিকাশের সাথেই জড়িয়ে আছে Meditation বা ধ্যান। হেরা পর্বতের গুহায় দীর্ঘদিন Meditation বা ধ্যান এর মাধ্যমেই মহানবী হযরত মুহম্মদ(স.) মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।
পৃথিবীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য আল্লাহ তা আলা মানুষকে নামাজের বিধান দিয়েছেন, যা কেবলমাত্র মানুষের কল্যাণের জন্যই। কারণ ‘নামাজ’ই হচ্ছে সর্বোত্তম ব্যায়াম বা মেডিটেশন। কোন মানুষ যদি যথাযথভাবে নির্ধারিত নামাজ সমূহ আদায় করেন তাহলে কোয়ান্টাম ম্যাথডে যে সকল আসন এর কথা বলা হয়েছে, যেমন- বঙ্গাসন, গোমুখাসন, ভুজঙ্গাসন, উষ্ট্রাসন, মৎস্যাসন, হলাসন, পবন মুক্তাসন, শশাঙ্গাসন এগুলোর কোন প্রয়োজন হবে না। কোয়ান্টাম ম্যাথডে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরণের মনোদৈহিক রোগ যেমন মাইগ্রেন, সাইনুসাইটিস, ঘাড়ে-পিঠে-কোমরে বা শরীরের যেকোনো স্থানে দীর্ঘদিনের ব্যথা, হজমের সমস্যা, আইবিএস, এসিডিটি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অনিদ্রা প্রভৃতি রোগগুলো থেকে মেডিটেশন এর মাধ্যমে মুক্ত থাকা যায়।
আজকাল অনেক ডাক্তারও শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথার ক্ষেত্রে ঔষধ সেবনের পরিবর্তে ব্যায়াম এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন যেখানে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সমূহকে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড ধরে বিভিন্ন পজিশনে রাখতে বলা হয়। আর এটাই হচ্ছে মহান আল্লাহ প্রদত্ত ‘নামাজ’ এর মূল মন্ত্র। প্রত্যেক নামাজে কেবলমাত্র রুকুতে ১৫/২০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করলে ঘাড় থেকে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যথার ৯০% আরোগ্য সুনিশ্চিত(পরীক্ষা বাঞ্চনীয়)। আর সিজদার মাধ্যমে সাধিত হয় মস্তিস্কের ব্যয়াম। যদি নামাজে রুকু-সিজদার বিভিন্ন স্তরে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে নামাজ আদায় করা হয় তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য আলাদা ভাবে ব্যায়াম করার প্রয়োজন হবে না। তার পরেও যদি কেউ নিয়মিত শারীরিক ‘ব্যায়াম’ করেন বা করতে চান তবে সেটা তার জন্য একটা বোনাস।
নামাজের বিভিন্ন পজিশনকে অনুকরণ করে কোয়ান্টাম ম্যাথডে বিভিন্ন আসনের অবতারণা করা হয়েছে; যেমন- ‘উষ্ট্রাসন’ হচ্ছে নামাজের রুকুর অনুকরণ আর ‘শশাঙ্গাসন’ হচ্ছে নামাজের সিজদার অনুকরণ। তাই জ্ঞানীদের উচিৎ সুস্থ্য থাকার জন্য, জীবনটাকে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার জন্য নামাজ কয়েম করা আর তাতে রথ দেখাও হবে, কলা বেচাও হবে এবং এটাই সর্বোত্তম।