ইংরেজীতে একটি বাক্য আছে, “Seek knowledge from cradle to the grave” অর্থাৎ দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর। পবিত্র কোরআন এর বাণীও তাই, ‘ইকরা’ মানে পড়। পবিত্র কোরআন এর এই ‘পড়া’ মানে আসলে জ্ঞানার্জন করাকেই বুঝানো হয়েছে। প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)ও বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমান নর/নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক। কাজেই ভাল শিক্ষার্থী বলতে আমি এখানে কেবল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীকে বুঝাইনি। ভাল শিক্ষার্থী বলতে আমি তাদেরকেই বুঝিয়েছি যারা অজানাকে জানতে চায়, জ্ঞানার্জন করা যাদের কাছে একটি ক্ষুধা, যারা আত্মমূল্যায়ন/আত্মসমালোচনা করতে পছন্দ করে, জ্ঞান অন্বেষণ করা যাদের কাছে সাধনার বিষয়; চাই সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীই হোক আর কোন পেশাজীবিই হোক।
বাংলাদেশে এখন ভাল ছাত্র/ছাত্রী বলতেই বুঝায় সকল পরীক্ষায় এ+ অর্জন। যেহেতু শিক্ষাজীবনের সকল স্তরেই এ+ অর্জন করেছে সুতরাং নিঃসন্দেহে উক্ত শিক্ষার্থী একজন ভাল ছাত্র/ছাত্রী, এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করার কোন কারণ আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, গোটা বিশ্ব যখন ডিজিটাল বিপ্লবে মেতে উঠেছে তখন এদেশের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা মেতেছে এ+, প্রাইভেট আর কোচিং বিপ্লবে। সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে, ফলাফল বের হতে অন্ততঃ মাস দুয়েক সময় লাগবে। আমি হলফ করে বলতে পারি, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া যে সকল শিক্ষার্থী এসএসসি তে এ+ পাবে তাদের সকলেই ইতোমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাইভেট/কোচিং শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলমান, যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তির স্বপ্ন দেখছেন, পরীক্ষা শেষ না হলে কি হবে, তাদের অভিভাবকরা ইতোমধ্যে একটা মোটা টাকা খরচ করে সন্তানের জন্য দেশের নামকরা সব কোচিং সেন্টারে বুকিং দিয়ে রেখেছেন। এমনকি, কেউ কেউ ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে অগ্রীম বাসা ভাড়াও নিয়েছেন সন্তানের কোচিং করার সুবিধার জন্য। কিন্তু একজন ভাল শিক্ষার্থীকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেই ফলাফল প্রকাশ এবং কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাইভেট শুরু করতে হবে, কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ না হতেই মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তির কোচিং এর জন্য বুকিং দিয়ে রাখতে হবে, মনে হয় বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যকোন দেশের মানুষই এটা বিশ্বাস করতে চাইবে না। আমার তো মনে হয় ঐসব শিক্ষার্থী নিজেকে যতই ভাল ছাত্র/ছাত্রী মনে করুক না কেন, আসলে এরা নিজেরাই জানে না, প্রকৃতপক্ষে তার/তাদের ভিতরে কী আছে, আর কী নেই কিংবা সে আসলে কী শিখেছে, আর কী শেখে নাই কিংবা প্রকৃতপক্ষে সে ঠিক কোন জায়গাটাতে দূর্বল। মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভর্তি পরীক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক এর শিক্ষার্থীরা পারবে না এমন প্রশ্ন করা হয় বলে আমার জানা নেই। আর উচ্চ মাধ্যমিকে যেসব শিক্ষার্থী এ+ পাবে তারা যদি মনে করে ভর্তি পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন করা হবে সেগুলো তারা এখনো শেখেইনি তাহলে তো বলতেই হয়, ভর্তি পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন করা হয় সেগুলো আসলেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের উপযোগী নয়। যদি বলা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের উপযোগী প্রশ্নই ভর্তি পরীক্ষায় করা হয়, তবে মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি কোচিং না করলে ঐসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে না; এমনটি হলে আমার মনে হয় সারা দেশের স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ করে দিয়ে বরং কোচিং সেন্টারগুলোকে প্রতিষ্ঠা করাই উত্তম হবে।
তো যাইহোক, সকল পরীক্ষায় এ+ পেলে তাকে ভাল ছাত্র/ছাত্রী বলা যায় কি না তা নিয়ে বিতর্ক করা অনর্থক বলে আমি মনে করি। এ বিতর্কে না গিয়ে বরং আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে একটি প্রশ্নপত্র তৈরী করেছি, যা প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল স্তরের শিক্ষার্থীর জন্যই প্রযোজ্য। যদি ঐ প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে একজন শিক্ষার্থী কমপক্ষে ৬০% নম্বর পায় তাহলে আমি বলবো উক্ত শিক্ষার্থী যে পরিমাণ জ্ঞানার্জন করেছে তা পঞ্চম শ্রেণী পাশের সমতুল্য। যদি কেউ পরীক্ষা দিয়ে কমপক্ষে ৮০% নম্বর পায় তাহলে তার মেধা মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বলে ধরে নেয়া যায়। যদি কেউ পরীক্ষা দিয়ে +৯৫% নম্বর পায় তাহলে তার মেধা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বলে ধরে নেয়া যায়। ৬০% এর কম নম্বর পেলে তার মেধা যে খুবই সামান্য তা বলার অপেক্ষা রাখেনা; চাই সে সকল পরীক্ষায় এ+ পাওয়া শিক্ষার্থীই হোক কিংবা একাডেমিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারীই হোক।
সকল শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে এতদসঙ্গে প্রশ্নপত্রটি সংযোজন করে দেয়া হলো। যেকেউ চাইলেই খাতা-কলম নিয়ে বসে পরীক্ষা দিয়ে নিজের মেধা যাচাই করে দেখতে পারেন।
পরীক্ষার নাম : নিজে নিজেই মেধা যাচাই
বিষয় : বিগত সময়ে অর্জিত জ্ঞান
সময় : নকল না করে আনলিমিটেড
পূর্ণমান : ১০০
[বিঃ দ্রঃ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে]
১। নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মাতৃভাষা হলো মায়ের ভাষা। মানুষ জন্মের পর থেকে বড় হওয়ার সাথে সাথে যে ভাষায় কথা বলতে শেখে সেটাই হলো তার মাতৃভাষা। যে ব্যক্তি শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মক্ষেত্রে মাতৃভাষার সঠিক প্রয়োগ করে না বা করতে পারে না তাকে প্রকৃত শিক্ষিত বলা যায় না।
(ক) | বাংলা ভাষায় মোট কতটি বর্ণ আছে? | ২ |
(খ) | উদাহরণসহ বাংলা বানানের কমপক্ষে দুটি নিয়ম লিখ। | ৪ |
(গ) | ‘তিলে তৈল আছে’এবং ‘তিলে তৈল হয়’ এ বাক্য দু’টি বাংলা ব্যকরণের আলোকে বিশ্লেষণ কর। | ৬ |
(ঘ) | ‘কাজলকালো’এবং ‘পুরুষসিংহ’ এ পদ দু’টি বাংলা ব্যাকরণের আলোকে বিশ্লেষণ কর। | ৮ |
২। নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যেকোন ভাষা শুদ্ধভাবে লিখা, পড়া ও বলার জন্য ঐ ভাষার ব্যাকরণ জানা অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে সকল শ্রেণীতেই বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে ইংরেজী পাঠদান করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এদেশের বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই শিক্ষাজীবন শেষে ইংরেজীতে কথা বলা তো দূরের কথা ইংরেজীতে কিছু লিখতে বললেও দাঁত কামড়ানো শুরু করে দেয়।
(ক) | ‘ডাক্তার আসার পর রোগীটি মারা গেল’বাক্যটি ইংরেজী Tense অনুযায়ী কোন Tense এর অন্তর্ভূক্ত? | ২ |
(খ) | ‘ক’নং প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্যটি ইংরেজীতে অনুবাদ কর। | ৪ |
(গ) | কিভাবে তুমি চিনবে কোনটি Past Continous Tense আর কোনটি Past Perfect Continous Tense? | ৬ |
(ঘ) | উদাহরণ হিসেবে Future Perfect Continous Tense এর একটি বাংলা বাক্য লিখে তা ইংরেজীতে অনুবাদ কর। | ৮ |
৩। নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
গণিত জীবনের সাথে জড়িত এমন একটি বিষয় যার সঠিক প্রয়োগ না জানলে অনেক সময় জীবনটাই বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। শুদ্ধভাবে কথা বলতে না পারলেও জীবনে চলতে ফিরতে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু সঠিকভাবে হিসাব-নিকাশ করতে না পারলে প্রতিনিয়তই ঠকতে হয়। কোন এক পোষাকের দোকানে গিয়ে জানা গেল, ১টি প্যান্ট ও ১টি শার্টের একত্রে মূল্য ১৫০০/- টাকা, ১টি প্যান্ট ও ১টি গেঞ্জির একত্রে মূল্য ১৩৫০/- টাকা এবং ১টি শার্ট ও ১টি গেঞ্জির একত্রে মূল্য ১১৫০/- টাকা।
(ক) | ১টি প্যান্ট, ১টি শার্ট ও ১টি গেঞ্জি কিনলে মোট কত টাকা খরচ হবে? | ২ |
(খ) | শুধু ১টি প্যান্ট কিনলে কত টাকা খরচ হবে? | ৪ |
(গ) | প্যান্ট, শার্ট ও গেঞ্জির মূল্যের মধ্যে কোনটির মূল্য সব থেকে বেশী? | ৬ |
(ঘ) | যদি প্যান্টের মূল্য তিনগুণ, শার্টের মূল্য দ্বিগুণ এবং গেঞ্জির মূল্য অর্ধেক করা হয় তাহলে ১টি প্যান্ট, ১টি শার্ট ও ১টি গেঞ্জি কিনতে পূর্বের তুলনায় কত টাকা কম বা বেশী খরচ করতে হবে? | ৮ |
৪। নিচের চিত্রটি ভাল করে দেখে নিয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
(ক) | যদি খুঁটি গেড়ে পুকুরটির কোন একটি কর্ণ থেকে বিপরীত কর্ণ পর্যন্ত রশি টেনে পুকুরটিকে দু’টি ত্রিভূজ সদৃশ করা হয় তবে প্রত্যেক ত্রিভূজের জায়গার পরিমাণ কত শতক হবে? [১ শতক=৪৩৫.৬০ বর্গফুট] | ২ |
(খ) | খুঁটি গেড়ে পুকুরটির কর্ণ বরাবর রশি টানা হলে এক খুঁটি থেকে অন্য খুঁটির মধ্যবর্তী অংশের রশির দৈর্ঘ্য(পুকুরটির কর্ণের দৈর্ঘ্য) কত হবে? | ৪ |
(গ) | পুকুরের চারিদিকে ৫ ফুট প্রশস্ত পাড় নির্মাণ করা হলে এবং প্রতি বর্গফুটে ৫/- টাকা হিসেবে ঐ পাড়ে ঘাস লাগাতে মোট কত টাকা খরচ হবে? | ৬ |
(ঘ) | পুকুরের চারিদিকে ৫ ফুট প্রশস্ত পাড় নির্মাণের পর যদি পুকুরের মাঝামাঝি অংশে প্রস্থ বরাবর ৫ ফুট প্রশস্ত একটি বাধ দিয়ে পুকুরটিকে ২টি সমান অংশে বিভক্ত করা হয়, তবে পাড় বাদে পুকুরের এক একটি অংশের ক্ষেত্রফল কত হবে? | ৮ |
৫। নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যে সরকার ব্যবস্থায় দেশের জনগণই সকল ক্ষমতার মূল উৎস, তাকে গণতান্ত্রিক সরকার বলা হয়। সর্বকালে, সর্বদেশে, সর্বসময় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাই সমাদৃত হয়ে আসছে। তবুও বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ ব্যবস্থাটি মুখ থুবড়ে আছে।
(ক) | বাংলাদেশে কোন ধরণের সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান? | ২ |
(খ) | ‘পঞ্জিকা বছর’ এবং ‘অর্থ বছর’ বলতে কী বুঝায়? | ৪ |
(গ) | বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় GPA বলতে কী বুঝায় এবং কীভাবে GPA নির্ণয় করা হয়? | ৬ |
(ঘ) | “একমাত্র সুস্থ পরিবারই একটি সুস্থ জাতি গঠন করতে পারে। কোন দেশে সুস্থ সরকার গঠনে সুস্থ জাতির কোন বিকল্প নেই”- ব্যাখ্যা কর। | ৮ |
পুনশ্চ্যঃ পরীক্ষা দিয়ে নিজে নিজেই অথবা কোন অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা কিংবা কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা খাতা মূল্যায়ন করে প্রাপ্ত নম্বর সহ কমেন্ট বক্সে লিখুন। প্রশ্নপত্রের সমাধান পেতে আগ্রহীগণও কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন।
মোঃ আব্দুল হাই খান
পরিচালক
গাইবান্ধা কম্পিউটার এন্ড আইটি এডুকেশন।
E-mail: haikhan2002@gmail.com