বঙ্গবন্ধু আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব, তবে আমি কোন রাজনীতিবিদ নই। কারণ আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে সম্ভবত এমন একজন নেতাও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি কোন রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন শুধুমাত্র রাষ্ট্রের ক্ষতি করার জন্য। তবে অনেক সময়ই নেতার চোখকে ফাঁকি দিয়ে দলের কিছু সুবিধাবাদী মানুষ (অমানুষও বলা যায়) নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন কিছু কর্মকান্ড করে থাকেন যা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। আর শেষ পর্যন্ত এর দায়-দায়িত্ব গিয়ে পড়ে নেতার ওপর। সে কারণেই আমার কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেমন সমাদৃত, ঠিক তেমনই জিয়াউর রহমান এবং হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের অবদানকেও আমি অস্বীকার করতে পারিনা। অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের অবদানকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

আজকের পোস্টটি আমি লিখতে চাই বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে। একজন মুসলমান হিসাবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও চেষ্টা করেন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে জীবন জীবিকা নির্বাহ করার জন্য। অবশ্য তিনি নিজেও মাঝেমাঝে একথা অকপটে জনসম্মুখে প্রকাশ করে থাকেন। আমার বিশ্বাস কোন নেতা যদি (তিনি যে ধর্মের অনুসারীই হোকনা কেন) তার স্ব-ধর্মের অনুশাসন মেনে পারিবারিক ও সামাজিক জীবন পরিচালনা করেন, তাহলে উক্ত নেতা কখনই জ্ঞাতসারে রাষ্ট্রের এমনকি তিনি যাকে পছন্দ করেন না এমন কোন মানুষেরও ক্ষতি তিনি করবেন না বা করতে পারবেন না।

দীর্ঘ সময় ক্ষমতা থাকার সুবাদে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন/করছেন। আমার বিবেচনায় এই সাহসী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সব থেকে কঠিন ছিল (১) বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্য্যকর করা (২) পদ্মা সেতুর মত একটা কঠিন প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহস দেখানো। শেখ হাসিনা অনেক বড় বড় কথা বলেছেন, অনেক বড় কিছু করেও দেখিয়েছেন, কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে ’বঙ্গজননী’ হিসাবে গ্রহণ করতে পারে, এমন কোন কাজ কি তিনি করেছেন অদ্যাবধি?

অনেক সময় অনেক ক্ষুদ্র বিষয়ও অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়, যদি তা মানুষের হৃদয়ের দাগ কাটতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের প্রবণতাও দেখা গেছে/যাচ্ছে। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, অথচ এদেশের ব্যাংক-বীমাসহ সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ‘সুদ’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদিও জাহেলী যুগের ‘রিবা’ এর সাথে আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যবহৃত ‘সুদ’ এর পুরোপুরি মিল নেই, তবুও সুদ শব্দকেই আরবি ‘রিবা’ এর প্রতিশব্দ হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এদেশে ঘোষণা দিয়ে তো কত প্রতিষ্ঠানেরই নাম পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। ঠিক নাম পরিবর্তনের মতই একবার ঘোষণা দিন না,  ”এখন থেকে ব্যাংক/বীমাসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ করার ক্ষেত্রে ‘সুদ’ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না”। প্রথমে নথিপত্র থেকে ‘সুদ’ শব্দটা মুছে ফেলতে হবে এবং সদিচ্ছা থাকলে পরবর্তীতে এর অভ্যন্তীরন কাঠামোতে পরিবর্তন আনাটাও খুব একটা কঠিন হবে না।

আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ‘সুদ’ শব্দটি বন্ধ করার ঘোষণা দেন, তাহলে তার এই সামান্য একটি ঘোষণাই আগামী প্রজন্মের কাছে একটি অসামান্য অবদান বলে প্রতিফলিত হতে পারে। বাংলাদেশ একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র তাই ধর্মীয় আবেগতাড়িত হয়ে আগামী প্রজন্ম আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম ‘বঙ্গজননী জননেত্রী শেখ হাসিনা’ হিসাবে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখবে এবং এরপর হবে ইতিহাস।

মোঃ আব্দুল হাই খান
পরিচালক
গাইবান্ধা কম্পিউটার এন্ড আইটি এডুকেশন।
E-mail: haikhan2002@gmail.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *