বোখারী শরীফ এর ৫৯৪৯ থেকে ৫৯৬৩ নম্বর পর্যন্ত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ঘরে প্রাণীর ছবি রাখা একটি জঘন্যতম কাজ। অন্যদিকে পবিত্র কুরআন এর কোন আয়াত/সূরাতে প্রাণীর ছবির বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে বলে আমার জানা নেই। যাইহোক, বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবন ব্যবস্থা এমন ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যে, কোন মানুষ চাইলেও নিজেকে কোনভাবেই প্রাণীর ছবি থেকে দূরে রাখতে পারে না। চাকুরী-বাকুরী ক্ষেত খামার যেখানেই যান না কেন, ছবির ব্যবহার আপনাকে করতেই হবে। এমনকি পবিত্র হজ্বব্রত পালন করতে গেলেও আপনার ছবির প্রয়োজন। বাজার থেকে চাল কিনলে প্যাকেটের গায়ে চাষীর ছবি, নুডলস কিনলে মুরগীর ছবি এবং আরও কত কি। ঘরে পেপার পত্রিকা, বই ম্যাগাজিন কিছুই নেই এমন বাড়ী খুঁজে পাওয়া কঠিন। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, যে টাকা খরচ করে ওগুলো কেনা হয় সেই টাকার গায়েই রয়েছে মানুষের ছবি। তার মানে কোনভাবেই একজন মানুষের পক্ষে প্রাণীর ছবি থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। তাহলে কি হাদীসের কথাগুলো মিথ্যা? না, তা কখনোই নয়। বরং ছবির বিষয়টি হাদীস এর আলোকে বিশ্লেষণ করতে চাইলে অবশ্যই তার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

শোভা বর্ধনের লক্ষ্যে মুরগীর ছবি দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা আর প্যাকেটে মুরগীর ছবিওয়ালা নুডলস কিনে এনে টেবিলে রাখা, এ দুটো বিষয় কখনোই এক হতে পারে না। কেননা, দেয়ালে মুরগীর ছবি দেখিয়ে কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ‘এটা কী’ উত্তরে বলা হবে, ‘এটা একটি মুরগীর ছবি’। অন্যদিকে নুডলস এর প্যাকেট দেখিয়ে যদি প্রশ্ন করা হয়, ‘এটা কী’ উত্তরে বলা হবে, ‘এটা নুডলস এর প্যাকেট’। তার অর্থ এখানে নুডলস এর প্যাকেটের ছবিটি উপেক্ষিত যা মানুষ নিজের অজান্তেই অভারলুক করে থাকে। তদুপরি, দেয়ালের ছবিটি ছিঁড়ে না যাওয়া পর্যন্ত ওটা দেয়ালেই শোভা পাবে, কারণ ওটা ঐ জন্যই টাঙানো হয়েছে। আর নুডলস খাওয়া শেষ হয়ে গেলেই প্যাকেট ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হবে। যদি নুডলস এর প্যাকেট কে ‘নুডলস এর প্যাকেট’হিসেবে না দেখে ছবি হিসেবে দেখা হয় তাহলে কোন মুসলমান এর পক্ষে এ নুডলস দোকানে বিক্রি করাও সমীচীন হবে না। কেননা, দোকানে এসকল জিনিস রাখা মানেই তো ঐ দোকানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করবে না।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত খুব কম জিনিসই আছে যেগুলোর প্যাকেট এর গায়ে প্রাণীর ছবি নেই। এক প্যাকেট মশার কয়েল কিনলেও তাতে মশার ছবি দেখা যাবে। তবে কি কোন মুসলমানের পক্ষে ব্যবসা করা উচিৎ নয়, কেননা, পণ্যগুলো তো তাকে দোকানের ভিতরেই রাখতে হবে? অথচ পবিত্র কুরআন এর আলোকে ব্যবসা হচ্ছে পবিত্র ও অত্যন্ত সম্মানের পেশা। টাকার গায়ে মানুষের ছবি আছে বলে যদি কেউ টাকা ব্যবহার করতে না চায়, তাহলে কি তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব? পবিত্র কুরআন যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেনি, কারণে অকারণে সেই বিষয়টি নিয়ে হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করা উচিৎ। একজন মুসলমানের জন্য উত্তম হচ্ছে প্রয়োজন ছাড়া কোন প্রাণীর ছবি ব্যবহার না করা। আর ঘরে রক্ষিত কোন বস্তুর/প্যাকেট এর গায়ে অঙ্কিত ছবিকে ছবি হিসেবে বিবেচনা না করে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা। তারপরেও যদি ঘরে রক্ষিত কোন পণ্যের প্যাকেটের ছবি কারো মনে পাপ বোধ জাগ্রত করে তাহলে উক্ত পণ্যের প্যাকেটটি যথাসম্ভব আড়াল করে রাখাই যথেষ্ট। প্যাকেট থেকে পণ্য বের করে নিয়ে প্যাকেটটি তৎক্ষণাৎ ছিঁড়ে ফেলতে হবে, এটা সম্ভবত বাতাসের শেষ প্রান্ত/সীমানা খোঁজার সামিল বৈ আর কিছু নয়।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *