আমাদের দেশে প্রতিবছর পিইসি, জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী এ+ পায় তা দেখলেই বোঝা যায়, এ দেশের শিক্ষার্থীরা ঠিক কতটা মেধাবী। পাশের হার যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে এ+ এর ছড়াছড়ি। এর পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রাইভেট/কোচিং এর কদর। ছাত্র জীবনে যখন নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে বাধ্য হয়ে দু’ একটা প্রাইভেট পড়াতাম, তখন নিজেকে কতই না অসহায় মনে হতো। ভাবতাম, কয়েকটা টাকার জন্য মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছি, এটা কোন সম্মানের কাজ হলো? কিন্তু সময়টা এখন আর আগের মত নেই। এখন যারা প্রাইভেট পড়ায় বা কোচিং করায় তারা এমনটি মনে করে না। বরং প্রাইভেট/কোচিং এখন একটা সম্মানজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রাইভেট/কোচিং সত্যিই কি মেধাবিকাশে সহায়ক? সত্যিই কি বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের মেধা বৃদ্ধি পেয়েছে? যদি এ+ ই মেধার প্রকৃত মাপকাঠি হয়ে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃদ্ধিই পেয়েছে। আর যদি মেধাবিকাশ মানে হয় অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি তাহলে মনে হয় মেধাবীর সংখ্যাটা খুব একটা বেশী হবে না।

পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয় রেগেমেগে ভূত। কারণ, লেখার শিরোনামটা কী, আর আমি লিখছি কী। আসলে এটা মনে হয় আমার রক্তেরই দোষ। যাই লিখতে যাই না কেন, এ+ প্রাইভেট আর কোচিং যেন আমার পিছু ছাড়েই না। তাই পাঠকের কাছে অনুরোধ, প্লিজ, আপনারা কিছু মনে করবেন না। কী করবো বলুন, যা রক্তে মিশে আছে, চাইলেই কি তা পরিত্যাগ করা যায়? তার চেয়ে বরং একটা কাজ করুন, কয়েকজন এ+ পাওয়া শিক্ষার্থীকে একত্রিত করে ওদেরকে বলুন, তোমাদের জন্য দু’টি পুরষ্কার আছে। পুরষ্কার দু’টি হলো, ১। নগদ ৫০০০/- টাকা ২। ৫০০০/- টাকা সমমূল্যের একটি বই যার শিরোনাম “টাকা উপার্জনের সহজ উপায়”। এখন বলো, তোমরা কে, কোন পুরষ্কারটা নিতে চাও?

আমার বিশ্বাস ঐ দলে যদি অন্ততঃ ১০ জন শিক্ষার্থী থাকে তবে দু’ একজন ছাড়া কিংবা সকলেই নগদ ৫০০০/- টাকাই নিতে চাইবে। আপনি কারণ জানতে চাইলে তারা বলবে, ঐসব বই পড়ে টাকা উপার্জন করা অত সহজ নয়। তার চেয়ে বরং ৫০০০/- টাকা দিয়ে একটা প্রাইভেট মাস্টার ঠিক করবো কিংবা কোন কোচিং এ ভর্তি হবো, যারা আমাকে টাকা উপার্জনের সহজ উপায় শিখিয়ে দেবে।

মনীষিরা বলেন, “মূর্খের সম্পদ ‘টাকা’ যদি কোন জ্ঞানীর হাতে তুলে দেয়া হয়, তাহলে ঐ জ্ঞানী তার সদ্ব্যবহার করবেন। অন্যদিকে জ্ঞানীর সম্পদ ‘বই’ যদি কোন মূর্খের হাতে তুলে দেয়া হয় তবে তা কখনোই সমাদৃত হবে না”। আসলে এখনকার শিক্ষার্থীরা জানেই না, জ্ঞান এমন ধরণের সম্পদ যা হস্তান্তরযোগ্য নয় অর্থাৎ এটা কেউ কাউকে দিতে পারে না। কোন শিক্ষক যদি বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান দান করেন, তাহলে আমি বলবো, ঐ শিক্ষকও জানে না, জ্ঞান জিনিসটা আসলে কী? প্রকৃতপক্ষে কোন শিক্ষকই শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান দিতে পারে না, বরং একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে জ্ঞানার্জনের রাস্তা দেখাতে পারেন। আর একজন ভাল শিক্ষক শিক্ষার্থীকে ওটাই দেন যেটা অনুসরণ করে একজন শিক্ষার্থী জ্ঞানী হয়ে ওঠে।

জ্ঞান বিতরণের জিনিস নয়, এটা নিজে নিজে অর্জন করতে হয়। আর জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর অধ্যায়ন ও সাধনা। কোন শিক্ষক বা পুস্তক কেউই কাউকে জ্ঞানী বানায় না, বরং জ্ঞানী হতে সাহায্য করে। একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শিখিয়ে দেন, কিভাবে অধ্যায়ন করতে হয়। আর শিক্ষকের দেখানো পথ অনুসরণ করে একজন শিক্ষার্থী প্রচুর অধ্যায়নের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে জ্ঞানী হয়ে ওঠে। যে শিক্ষার্থী সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে সারাদিন এমনকি রাত্রী ১০/১১টা পর্যন্ত স্কুল-কলেজ, কোচিং আর প্রাইভেট নিয়েই ব্যস্ত থাকে, ঐ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করে কখন, মনে হয় সে তা নিজেই জানে না।

 

মোঃ আব্দুল হাই খান
পরিচালক
গাইবান্ধা কম্পিউটার এন্ড আইটি এডুকেশন।
E-mail: haikhan2002@gmail.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *