প্রত্যেক মানুষেরই কম বেশী জ্ঞান রয়েছে। তবে সব মানুষকে জ্ঞানী মানুষ বলা হয় না। আপনি ভাবছেন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীটি অর্জন করেছেন, কাজেই আপনি একজন জ্ঞানী মানুষ। তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারী সকলেই জ্ঞানী, তাই না? কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাজীবনে অর্জিত কোন সনদপত্রেই কিন্তু জ্ঞানের কথা উল্লেখ থাকে না, বরং সনদপত্রে থাকে কোন একটি শ্রেণীতে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার কথা। তারমানে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া আর জ্ঞানী এক জিনিস নয়।

আমাদের মনে রাখতে হবে জ্ঞান পরিমাপ করা হয় মানুষের কর্ম দ্বারা। অর্থাৎ একজন মানুষের ডিগ্রী যাই হোক না কেন, তার কর্মে যদি জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ না ঘটে তাহলে তাকে জ্ঞানী মানুষ বলার কোন প্রশ্নই আসে না। যেমন আপনি ছাত্রজীবনে পাঠ্যপুস্তকে পড়েছেন, সততা একটি মহৎ গুণ অথচ কর্মজীবনে এসে আপনি নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য হরহামেশাই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কাজেই আপনি কোনভাবেই নিজেকে একজন জ্ঞানী মানুষ বলতে পারেন না।

পাঠ্যপুস্তকে আপনি পড়েছেন, সকল মানুষের অধিকার সমান। তাহলে লেখাপড়া শেষ করে চাকুরীর জন্য ঘুষ কেন দেন? যদি বলেন, ঘুষ না দিলে আজকাল চাকুরী পাওয়া যায় না, তাহলে কি বলবেন, যদি আবেদনকারী কোন প্রার্থীই ঘুষ দিতে রাজী না হয় তাহলে ঐ পদটি শূন্যই থেকে যাবে? যদি আপনার উত্তর ‘না’ হয় তাহলে ঐ পদে নিশ্চয় তাকেই নিয়োগ দেয়া হবে যিনি অধিকতর যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন; আর এটাই কি সমঅধিকার এর দৃষ্টান্ত নয়? চাকুরী পাওয়া অবশ্যই আপনার অধিকার কিন্তু ঘুষ দিয়ে অন্যের অধিকার খর্ব করা কখেনো জ্ঞানীদের কাজ হতে পারে না।

আপনি একজন ব্যবসায়ী। কোন জিনিস কেনার সময় ভেজাল দেয়াটা আপনি নিজের জন্য পছন্দ করেন না, অথচ বিক্রি করার সময় আপনি ভেজাল জিনিস বিক্রি করছেন। যা আপনি নিজের জন্য পছন্দ করেন না, অথচ অন্যের জন্য আপনি তাই করতে ভালোবাসেন, এটা কোন জ্ঞানী মানুষের কাজ হতে পারে না।

আপনি একজন শিক্ষক। আপনি বিশ্বাস করেন আপনার প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে কোন শিক্ষার্থীই ভাল ফল করতে পারবে না, তাই আপনি আপনার সন্তানকে অন্যকোন ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করাচ্ছেন। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আপনার নিজের আস্থা নেই, সেই প্রতিষ্ঠানে সেবা দেয়ার নামে মাসে মাসে বেতন নেয়া কিংবা অন্যদেরকে উক্ত প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে বলা কখনোই কোন জ্ঞানীর কাজ হতে পারে না।

আপনি একজন ডাক্তার। আপনি পাঠপুস্তকে পড়েছেন, ডাক্তার হচ্ছে মানুষের সেবক, রোগীর সেবা করাই আপনার ধর্ম। কিন্তু বাস্তবে আপনি রোগীর সাথে যে আচরণ করেন তাতে আপনাকে সেবক না বলে শোষক বলাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। কেননা, যে রোগের চিকিৎসা করার জন্য পরীক্ষার কোন প্রয়োজনই নেই সে রোগীকেও আপনি অন্তত ৫টি টেস্ট করতে দেন। সুতরাং আপনি একজন ডাক্তার ঠিকই, তবে অবশ্যই আপনি জ্ঞানী মানুষ নন।

আপনি একজন রাজনীতিবিদ। পাঠপুস্তকে আপনি পড়েছেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই জনগণের জন্য অধিকতর কল্যাণকর। কিন্তু বাস্তবে আপনি অন্যের মতামতের মূল্যই দিতে জানেন না। তাহলে আপনি নিজেকে জ্ঞানী বলবেন কিভাবে? দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে দলনেতা ভুল করলেও আপনি তার প্রতিবাদ করেন না, এটা জ্ঞানী রাজনীতিবিদের কাজ নয়। জ্ঞানী হতে হলে সাদাকে ‘সাদা’ এবং কালোকে ‘কালো’ বলার অভ্যাস গড়তে হবে, অবশ্যই তা পক্ষ বিবেচনা করে নয়।

আপনি ও আপনার পরিবার মূর্তিপূজা করেন। কিন্তু আপনি জানেন যে, মাটির তৈরী মূর্তিগুলো কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না, তারপরও আপনি ঐ মূর্তিগুলোরই পূজা করেন। নিজের হাতে মূর্তি বানিয়ে তার পূজা করা কোন জ্ঞানী মানুষের কাজ হতে পারে না।

আপনি একত্ববাদে বিশ্বাসী। আপনি মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন। আপনি দেখেন কীভাবে ঈমাম সাহেব রুকু সিজদা করেন। উপরন্ত আপনি শুনেছেন/পড়েছেন, নামাজ আদায় করতে হয় ধীর স্থিরভাবে, অথচ জামাতের বাইরে আপনি নামাজ আদায় করেন শর্টকার্ট পদ্ধতিতে। যা শুনলেন, যা পড়লেন, তা যদি নিজের জীবনে বাস্তবায়ন না করেন, তাহলে আপনি নিজেকে জ্ঞানী ভাবেন কী করে?

আপনি বিজ্ঞান মনস্ক। বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কার আপনাকে মুগ্ধ করে। আপনি পাঠ্য পুস্তকে পড়েছেন, চন্দ্র সূর্য প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষ পথে বিচরণ করে। বিজ্ঞানীরা এটা বেশ কিছুদিন হলো আবিস্কার করেছে। আপনি বিজ্ঞানীদের কথা বিশ্বাস করেন। কিছুদিন আগে আবিস্কার করা বিজ্ঞানীদের কথা বিশ্বাস করলেও বিজ্ঞানীদের বহু আগে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে পবিত্র কোরাণে একথা বলা হলেও আপনি কোরাণ অনুসরণ করেন না। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানময় কোরাণ এর পার্থক্য করতে না পারলে আপনি নিজেকে জ্ঞানী ভাবেন কী করে?

মোঃ আব্দুল হাই খান
পরিচালক
গাইবান্ধা কম্পিউটার এন্ড আইটি এডুকেশন।
E-mail: haikhan2002@gmail.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *