আজকাল একটা কথা প্রায়শই শোনা যায়, চাকুরী নাকি সোনার হরিণ। আর সে হরিণ ধরতে গেলে নাকি মামু আর মালটুশ দুটোই থাকতে হয়। মামু হচ্ছে উপরের লেবেলের কোন কর্তার সুপারিশ আর মালটুশ হচ্ছে টাকা। সোনা যায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকুরী পেতেও নাকি কমপক্ষে ১৫.০০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কিন্তু এই ঘুষের টাকা কে, কিভাবে নেয় তা আমার জানা নেই। কখনো কখনো মনে হয় এটি একটি গুজব। কিন্তু যখন চাকুরী প্রার্থী এবং চাকুরী করছেন এমন প্রায় সকলের মুখেই একথা শোনা যায় তখন এটাকে গুজব বলার কোন প্রশ্নই আসে না। আর তাছাড়া, পত্র-পত্রিকাতেও এ নিয়ে যথেষ্ট লেখালেখি হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু কেন এই ঘুষ বাণিজ্য? এর সহজ উত্তর, জ্ঞানের অভাব। চাকুরী প্রার্থীরা জ্ঞানী হলে প্রত্যেকেই ভাবতো চাকুরীটা আমার যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আবেদনকারী অন্য সকলেরই তা প্রয়োজন। সুতরাং চাকুরীটা তারই পাওয়া উচিৎ, আবেদনকারীদের মধ্যে যিনি সবথেকে বেশি যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। অতএব চাকুরীটা পাওয়ার জন্য আমরা কেউই ঘুষতো দেবইনা, উপরন্ত কেউ ঘুষ দিয়ে পদটা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে আমরা তা প্রতিহত করবো। আর এটাই হচ্ছে চাকুরীতে “ঘুষ বাণিজ্য’ বন্ধের মোক্ষম দাওয়াই। কিন্তু বাংলাদেশে এটা অসম্ভব, কারণ এদেশে কেউই জ্ঞানী হওয়ার জন্য লেখাপড়া করেনা। এদেশের সন্তানেরা লেখাপড়া করে একটা ভাল সনদপত্র আর একটা ভাল চাকুরী পাওয়ার জন্য। একটা ভাল সনদপত্র আর সাথে যদি মালটুশ থাকে তাহলে তো কথাই নেই। আর যাদের তা নেই তারাই নাকি কপাল পোড়া।
তাহলে কি চাকুরীতে ‘ঘুষ বাণিজ্য’ বন্ধ করা অসম্ভব? একেবারেই না, যদি কোনভাবে সোনার হরিণটাকে আমরা সোনার ছাগলে পরিণত করি তাহলে সোনার ছাগলের জন্য আর কেউই ঘুষ দিতে রাজী হবে না। এখন দেখা যাক, কিভাবে খুব সহজেই আমরা সোনার হরিণকে সোনার ছাগলে পরিণত করতে পারি।
১। চাকুরী হওয়ার পর সরকারি চাকুরীজীবি প্রত্যেক পরিবারে (যাদের মাসিক বেতন ৪০০০০/- টাকার উপরে) জরিপ করে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট চাকুরীজীবির বেতনে ঠিক কতজনের ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হয় এবং এতে মাসে তার কত টাকা ব্যয় করতে হয়। উল্লেখ্য, ০৪(চার) সদস্যের একটি পরিবার যদি ভাড়া বাড়ীতেও বসবাস করে তবুও সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য ৪০০০০/- টাকার বেশী লাগার কথা নয়।
২। ৪০০০০/- টাকার বেশী বেতন প্রাপ্ত প্রত্যেক চাকুরীজীবির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক খরচের সাথে প্রতিমাসে আপদকালীন সঞ্চয় হিসেবে ৫০০০/- টাকা যোগ করে বেতন হিসেবে প্রদান করে অবশিষ্ট টাকা কর্তন করে একটি নির্দিষ্ট ফান্ডে জমা করতে হবে এবং উক্ত ফান্ডের টাকা দ্বারা বেকার ভাতা চালু করতে হবে।
৩। যেসব কর্মকর্তা ঘুষ থেতে অভ্যস্ত তাদেরকে ঘুষ খেতে বাধা না দিয়ে বরং প্রকাশ্যে ঘুষ খাওয়ার অনুমতি দিয়ে প্রাপ্য বেতনের ১০০% কর্তন করতে হবে। অর্থাৎ যারা ঘুষ খাবেন তারা বেতন পাবেন না বরং ঘুষের টাকাতেই তাদের সংসার চালাতে হবে। কেননা, একজনের টাকা আছে তাই সে ঘুষ দিয়ে চাকুরীতে ঢুকে ঘুষ খেয়ে টাকার পাহাড় গড়বে, আর অন্যজন লেখাপড়া শেষ করে ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সারাটা জীবন বেকার থেকে অন্যের গলগ্রহে পরিণত হবেন এটা কখনো সভ্য জাতির কাজ হতে পারে না।
কী ভাবছেন, এ ব্যবস্থা চালু করলে কেউ ঘুষ দিয়ে চাকুরীতে ঢোকার কথা ভাববে? কশ্মিনকালেও না। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে যোগ্যরাই নিয়োগ পাবেন। একসময় ঘুষ শব্দটাই মানুষ আস্তে আস্তে ভুলে যাবে আর দেশটা হবে একটা সোনার দেশ।
মোঃ আব্দুল হাই খান
পরিচালক
গাইবান্ধা কম্পিউটার এন্ড আইটি এডুকেশন।
E-mail: haikhan2002@gmail.com