বিশ্বব্যাপী এক মহা আতঙ্কের নাম “করোনা ভাইরাস”। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তথা বিশেষজ্ঞদের মতে এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববাসীও তা বিশ্বাস করেছে এবং তদানুযায়ী সতর্কতাও অবলম্বন করে চলেছে এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এটা বিশ্বাস করি না। আমার মতে ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই। অবশ্য পবিত্র হাদীসের বাণীও তাই। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) বলেছেন, ‘‘রোগের সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই।” পাশাপাশি তিনি প্লেগ বা কুষ্ঠ রোগী সম্পর্কে বলেছেন, “কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাকো, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো।” অন্য একটি হাদিসে প্রিয় নবী (সঃ) বলেছেন,“যখন তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।”
তবে একথা ঠিক যে, রোগের জীবাণু একজনের কাছ থেকে অন্যজনের মাঝে সংক্রমিত হতেই পারে। তাই বলে জীবাণু সংক্রমিত হওয়া মানেই রোগ সংক্রমিত হওয়া নয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সুস্থ রাখেন, যাকে ইচ্ছা রোগাক্রান্ত করেন। যদি আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি না থাকে, তাহলে জীবাণু সংক্রমিত হলেও রোগ হয় না। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিত জীবাণুর সংক্রমিত হবারও যেমন সামর্থ্য নেই, আবার সংক্রমিত হয়েও কারো দেহে রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। জীবাণু সংক্রমিত হলেও অনেক সময়েই মানুষ রোগাক্রান্ত হয় না। যেমনঃ বসন্ত রোগীর সংস্পর্শে থাকলে কেউ কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয়, আবার কেউ কেউ আক্রান্ত হয় না।
আমার ধারণা, যদি বিশ্বের সকল কিংবা কোন একটি এলাকার সকল মানুষের (যারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে) করোনা পরীক্ষা করা হয় তাহলে ৯৫% মানুষের শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এটি নিঃসন্দেহে একটি গজব। আসলে গজব কী, সেটাই মানুষ বুঝতে চায়না। যারা সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করেন না, তাদের বিচারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে প্রকৃতির মাঝে নানা রকম ধ্বংস লীলা সাধিত হয় বা বির্তন ঘটে থাকে, প্রকৃতপক্ষে এটাই গজব। আর যারা সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করেন, তারা বিশ্বাস করেন সৃষ্টিকর্তা ক্ষুব্ধ হলে তার পক্ষ থেকে মানুষের মাঝে গজব হিসেবে নানা রকম বিপদ-আপদ চলে আসে।
এবার আসা যাক পবিত্র কোরাণ কী বলে। পবিত্র কোরাণে মহান আল্লাহ-তা-আলা ঘোষণা করেছেন, “আর আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছু ভয়, আর ক্ষুধা দিয়ে, আর মাল-আসবাবের, আর লোকজনের আর ফল- ফসলের লোকসান ক’রে। আর সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের- যারা তাদের উপরে কোনো আপদ-বিপদ ঘটলে বলে- নিঃসন্দেহ আমরা আল্লাহ্র জন্যে, আর অবশ্যই আমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তনকারী” (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৫ ও ১৫৬)।
উপরোক্ত আয়াত থেকে এটাই স্পষ্ট যে, যেকোন মহামারী আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা সুস্থভাবে জীবন-যাপন করি, আর কেউবা রোগ-বালামুছিবতে আক্রান্ত হই।
করোনা ভাইরাস এর কারণে আজ বিশ্বব্যাপী নিম্নরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে-
১। মানুষের মাঝে এক চরম ভীতি বিরাজ করছে, ফলে করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেলে মানুষ এমনকি পরিবারের সদস্যরা পর্যন্ত তার সৎকার তথা দাফন-কাফনে অংশ নিতে ভয় পায়।
২। করোনার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে, যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বে প্রতিদিন নানা রোগে লাখ লাখ মানুষ মারা যায় সেই সংখ্যাটা করোনার মৃত্যুর চেয়ে অন্তত ১২ গুণ বেশি। তবু করোনা আতঙ্কে সারাবিশ্ব অচল। থেমে গেছে অর্থনীতির চাকা। বেকার হয়ে পড়েছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যবস্থা। বলা হচ্ছে, করোনা আতঙ্কই এখন বড় মহামারী।
ইন্টারনেটে পাওয়া এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন মাসে বিশ্বে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ মারা গেছে ক্যান্সার, সর্দি-কাশি, ম্যালেরিয়া, এইডস, ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি কারণে। গত তিন মাসে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর জরিপ অনুযায়ী, এ সময়ে করোনায় মারা গেছেন ৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৭ জন। আর শুধু ক্যান্সারেই এই তিন মাসে মারা গেছেন ১১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ। অন্যান্য রোগের মধ্যে সাধারণ ঠান্ডা ও সর্দি-কাশিতে মৃত্যু ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২, ম্যালেরিয়ায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৮৪, এইডসে ২ লাখ ৪০ হাজার ৯৫০, মদপানে সাড়ে ৫ লাখ এবং ধূমপানে ৮ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে তিন মাসে। ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ আরও নানা রোগে মৃত্যু তো রয়েছেই। এছাড়া আত্মহত্যা করেছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৬ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭৯ জন। অথচ বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক এখন মহামারি।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে চলা করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব থামছেই না। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটিতে। মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি দেশে করোনা প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর এ বিষয়ে উপরোক্ত পবিত্র কোরাণের আয়াতে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে। সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, করোনা ভাইরাসের ইঙ্গিত মহাগ্রন্থ আল কোরাণেই নিহিত।
মোঃ আব্দুল হাই খান
পরিচালক
গাইবান্ধা কম্পিউটার এন্ড আইটি এডুকেশন।
E-mail: haikhan2002@gmail.com