প্রত্যেক জীবের ক্ষেত্রে মৃত্যু একটি অবধারিত বিষয়। অনেকে মনে করেন, অন্যান্য জীবের মত মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের অস্তিত্বও পচে-গলে কিংবা পোড়ানো হলে ছাই-ভষ্ম হয়ে মাটিতে বিলীন হয়ে যায়; আর এটাই হচ্ছে জীবের জৈবিক প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব অর্থাৎ মানুষের স্থান সকল সৃষ্টির উপরে। কেননা, মানুষ ভিন্ন অন্যকোন প্রাণীদের মাঝে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হয় আপাতত মানুষ এ ধরণের তথ্যের সন্ধান এখনো পর্যন্ত খুঁজে বের করতে পারেনি। তাই অন্যান্য জীবের মৃত্যু আর মানুষের মৃ্ত্যুকে একই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোন সুযোগ নেই।
কোন মানুষ মারা গেলে যা চলে যায় তাকে আমরা ‘আত্মা’ বলি, আর যেটা পড়ে থাকে সেটাকে বলি ‘দেহ’। তার মানে ‘আত্মা’ এবং ‘দেহ’ দু’টো আলাদা বিষয়। কোন মানুষ কখনোই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখিয়ে বলে না এটা আমি বরং বলেন এটা আমার হাত, এটা আমার পা, আমার মাথা, আমার চোখ, আমার মুখ ইত্যাদি। তাহলে এটা পরিষ্কার যে, ‘আমি’ হচ্ছে একটি স্বতন্ত্র স্বত্বা যা কতগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত একটি দেহের মাঝে অবস্থান করে। অর্থাৎ মৃত্যু বলতে বুঝায় দেহ পরিত্যাগ করে আত্মার অন্যত্র গমন। এটি ঠিক বিয়ের পর মেয়েদের বাবার বাড়ী ছেড়ে শ্বশুর বাড়ী যাওয়ার মত। ছোট থেকে বাবার বাড়ীতে লালিত-পালিত হয়ে একসময় বাবার বাড়ীর মায়া ত্যাগ করে বিয়ের পর একজন নারীকে অন্য বাড়ীতে আশ্রয় নিতে হয় এবং একসময় সেটাই হয়ে যায় তার নিজের বাড়ী।
শ্বশুর বাড়ীতে যাওয়ার পর তাকে কতজনে কত কিছুই না জিজ্ঞাসা করে, তোমার নাম কী, বাবার নাম কী, লেখাপড়া জান কি না আরও কত কি? বাড়ীতে কোন নতুন অতিথী এলে তাকে প্রশ্ন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক। মৃত্যুর বিষয়টা ঠিক এরকমই। আত্মা যখন এক জগত ছেড়ে অন্য জগতে চলে যায় তখন সে জগতের বাসিন্দারাও তার কাছে নানা প্রশ্ন করে, তোমার প্রতিপালক কে? তোমার ধর্ম কী ছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি এবং এটাই স্বাভাবিক কেননা, আত্মা তখন ঐ জগতে নতুন অতিথী।
মৃত্যুর পর মানুষের অস্তিত্ব পচে-গলে কিংবা পোড়ানো হলে ছাই-ভষ্ম হয়ে মাটিতে বিলীন হয়ে যায় এটা যারা বলেন, তারা আসলে ১ নম্বরের গবেট। কেননা, কোন শবদেহকে যখন কবর দেয়া হয় কিংবা পোড়ানো হয় তার অনেক আগেই আত্মা চলে যায়। সুতরাং যা পচে-গলে কিংবা পোড়ানো হলে ছাই-ভষ্ম হয়ে মাটিতে বিলীন হয়ে যায় তা কোন মানুষ(আত্মা) নয় বরং মানুষের দেহ। আত্মা দেহ ত্যাগ করে অন্যত্র গিয়ে নতুন দেহ ধারণ করে, নাকি দেহ ছাড়াই সেখানে অবস্থান করে, সেটা আলাদা প্রশ্ন। তবে দেহের প্রয়োজন হলে প্রথমবার যিনি শূন্য থেকে দেহ সৃষ্টি করেছিলেন, প্রয়োজন হলে দ্বিতীয়বারও তিনি শূন্য থেকে দেহ সৃষ্টি করে আত্মাকে সেখানে আশ্রয় দিতে পারেন। এটা বিশ্বাস করার জন্য কোন বিশেষ ধর্মের অনুসারী হওয়া কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন নেই, জ্ঞানী হওয়াই যথেষ্ট।